প্রশান্ত বারিকের কবিতা
জ্বলে যাওয়া
আজ কোনো কথা নয়, গান নয় -
আজ শুধু জ্বলে যাওয়া। ...
মাটির প্রদীপ হয়ে বসে থাকা
তুলসী তলায়।
কৃষক
বৃষ্টি-স্নাত ওই উর্বরা ভূমির দিকে চেয়ে
নেচে উঠে আমার এই কৃষিকের মন.
অথচ ও মাটি আমার নয়-
তার, যে জানেনা প্রকৃত কর্ষণ।
মানুষ
ঘাস ও পাথরের সহনশীলতা
আমার নেই.
আমি তো চিরকালের সেই এক
ছেঁড়া ফাটা সামান্য মানুষ। ..
মৃদু রক্ত ক্ষরণে তাই আর্তনাদ।...
অগ্ন্যুত্পাতে ফেঁপে ওঠে,
ভেতর বাহির।
থেকো যেনো তুমি
এই যে পথ , দুই পাশে দেবদারু বীথি -
এই পথে একদিন - নগ্ন পায়ে-
একা একা চলে যাবো আমি।
দুঃখ করোনা তাতে।
এই রকম এলোচুলে-
শাঁখা ও সিঁদুরের গন্ধভরা দেহে
সেদিনও অন্য কারো প্রতীক্ষায় থেকো যেন তুমি।
নক্ষত্র গান
ঘুমন্ত তোমার দেহ থেকে
দস্যু হাত-গুলি। ....
নির্মম ছিঁড়ে নিলো, ফুল ও সজীব যত পাতা। .
যন্ত্রনায় কিরকম ফেঁপে উঠল শাখা প্রশাখা।
তবু তুমি , প্রতিবাদ করলে না কেনো
কেননা তখন, হিরণ্ময় নক্ষত্রের গানে - ভরে আছে ,
হৃদয় তোমার।
ফিরে আসা
মাটির গভীরে শুয়ে দেখি
তোর দুচোখে এতো মায়াবী স্বপ্ন। ..
হাস্নুহানার গন্ধ চারদিকে। ..
অন্ধকার খাদের ভেতর থেকে
তাই তো বারে বারে উঠে আসি -
কঙ্কাল হাতখানি দিয়ে ছুঁতে যাই
তোর ঘুমন্ত মুখের ফুল..
গাছ
(শশাঙ্খ শেখর মুখোপাধ্যায় শ্রদ্ধাভাজনেষু )
প্রকৃত গাছের কাছে এলে
তৃণতম এ যায় মানুষ-
তখন সমূহ অহংকার তার
সবুজ নির্যাস হয়ে
ভূমিতে লুটোয়।
প্রকৃত গাছের কাছে এসে
বুঝেছি এই নিরালায়।
ওষধি বৃক্ষের তলে
(ধূর্জটি চন্দ শ্রদ্ধাভাজনেষু )
সব পথেই কিছু কিছু কাঁটা থাকে,
খানা খন্দ থাকে। ....
তবু এসবই শেষ কথা নয়-
সন্ধ্যার সে নদীর ঘাটে
নক্ষত্রের আলো বুকে, প্রতীক্ষায় থাকে এক
গন্ধ বকুল। ......
তখন সমস্ত ক্ষত মুলে-
শীতল-চন্দন গন্ধ ,
ওষুধি বৃক্ষের তোলে, দুলে উঠে প্রিয় ভূমি,
আদিম নিবাস।
তবে কেন তুমি আজ
( অপূর্ব মজুমদার শ্রদ্ধাবাজনেষু )
যদিও পাথর।... তবুও তোমার তো ছিল জানি,
ঢোল ঢোলে কালো জল। ...
ভাঁট ফুল। ....উড়িধান। ....পদ্ম। ... সালুক -
ছিল প্রিয় আঁশ গন্ধ , ...কোমলতা নীল শঙ্খিনীর।
তবে কেন তুমি আজ জলজ স্বপ্নহীন। .স্মৃতিহীন। ....
আত্মাহীন কামী ,ধু ধু মাঠে নির্ঘুম পড়ে থাকো এক-
নোন বুক ক্ষয়ে যায়- তীব্র সূর্যোদহনে। ...
পরমান্ন হাতে নিয়ে উঠে কোনো আসে না তো
অন্নদা সুজাতা।
করিডর
কে ও ? ফুল নাকি।
সাদা গাউন পরে স্টেথিস্কোপ হাতে হেঁটে গেল
টিমটিমে আলো জ্বলা সুনসান করিডর দিয়ে। ......
অজস্র ঝিঁঝিপোকা, ঝিঁঝিপোকার গুঞ্জন মাথার ভেতর।
বালিয়াগুড়ির ডাঙায় দাঁড়িয়ে অপরূপ সূর্যাস্ত -
কচি-ধান খাওয়ার অপরাধে
হরিণীর মত সুন্দর প্রথম গর্ভীনী আমাদের ছাগলটিকে
অহি মোড়ল আলের উপর আছড়ে মেরে ফেললে ,
ওঃ মাগো। কি রক্ত-
ছাগল খুঁজতে খুঁজতে -
দিদির হাত-ধরে, বালিয়াগুড়ির রক্তিম ডাঙায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত। ......
সেই কবে ? সেই কবে ?
অজস্র ঝিঁঝিপোকা ,ঝিঁঝিপোকার গুঞ্জন মাথার ভেতর।
হলুদ ঝিঙে ফুলে , ঝিঙে ফুলে ভোরে যাচ্ছে রাঙামাটির উঠোন আমার -
গভীর অন্ধকার নেমে আসছে
বাঁশ বাগানের মাথার উপর থেকে শ্রাবন সন্ধ্যার ঝমঝম অন্ধকার। ......
অজস্র ঝিঁঝিপোকা কোথায় অন্ধকারে- কেবলই গুঞ্জন
অন্ধকার থেকে মাথার ভেতর।
কে ও ? ফুল নাকি !
সাদা গাউন পরে স্টেথিস্কোপ হাতে চলে গেল,
সম্মুখে আমার -অজগরের হাঁ টিমটিমে আলো জ্বলা ওই সুনসান লম্বা করিডর -.
No comments:
Post a Comment