html

Friday, November 16, 2018

কল্যাণাশীষ মন্ডল

কল্যাণাশীষ মন্ডল


জন্মাষ্টমী 


গতকাল কেষ্ট ঠাকুরকে খুব বিরক্ত করলে তাই না !!! বেচারা নতুন নতুন জামা কাপড় পরে, মালা ঝুলিয়ে, মাথায় মুকুট চাপিয়ে এই ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল অবস্থা | তার উপর আবার প্রদীপ ধূপ-ধূনোতে ঘেমে নেয়ে একসা | কোন নাড়ুতে চিনি কম আর কোনটায় তিল বেশি তা বলার অবকাশই আর দিলেনা;  অনবরত ঢং ঢং করে কাসর ঘন্টা কানের কাছে বাজিয়ে চলেছ যে...| সবাই বিরক্ত করবে দেখে আমি বাপু আর বিরক্ত করিনি কেষ্ট ঠাকুরকে, মানে মানে সকাল থেকে কেটে পড়েছিলাম শুধু একবার ‘Happy Birth Day’ wish করে | কেবল শুকনো কথায় মন ভিজলো কি ভিজলো না সে আর কে দেখতে যাচ্ছে | 


ঠিক দুই বছর আগে, এক রাতে ল্যাব থেকে হোস্টেলে ফিরছি আমার তৈল পিপাসু সাইকেলে ক'রে | জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আঁকা বাঁকা রাস্তা চলে গেছে | হঠাৎ সামনে মনে হলো কিছু একটা পড়ে রয়েছে রাস্তায় | বাহনটাকে থামিয়ে কাছে গিয়ে দেখি একখানা ময়ুর পালক | এ রাস্তায় এত রাতে কারুর ব্যাগ থেকে এটি পড়ে গেছে এমনটি যে নয় তা বিলক্ষণ | জঙ্গলে ভরা জে.এন.ইউ তে ময়ুরের অভাব নেই | আকছার ঘুরে বেড়ায় | মেঘের মেঘমল্লার ধ্বনি তো দূরে থাক, বিমানের  সামান্য  উড়ে যাওয়া শব্দে  সবাই মিলে একসাথে সুর ধরে | কেকা সুরে তখন কান পাড়া দায় | কিন্তু মজার বেপার হলো এতদিন এখানে থেকেও একখানা ময়ুরের পালক জোগাড় করতে পারিনি | জঙ্গলে ঘোরার সময় একবার এক ময়ুরকে বল্লাম চুপটি করে দাঁড়া, গলাটা একটু বাঁকিয়ে পোজদে, তোর ছবি আমার বন্ধুদের দেখাবো কেমন !!! এই বলে যেইনা ক্যামেরায় তাক করতে গিয়ে একচোখ বন্ধ করেছি এমনি ফুরুৎ !!! বেটা পাখি হলেও আস্ত একটা গাধা, আমি যে তাকে চোখ মারছিনা সেটা আর বুঝলনা | লজ্জা পেয়ে লুকিয়ে গেল | ছবি তোলা আর হয়নি সেদিন | এখন তাই ভাল করে চারপাশটা দেখতে গিয়ে হঠাৎ চোখ গেল গাছের ডালে, যেখানে দাঁড়িয়ে আছি ঠিক তার উপর | দেখি, সেই বেটা ঝিমোছে | আর তার একটা সুশোভিত পাখনা থেকে একটি খসে পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর | হাতে নিয়েই সাথে সাথে খেয়াল হলো আজ তো কেষ্ট ঠাকুরের জন্মদিন যাই তাঁর জিনিস তাঁকেই উপহার দিয়ে আসি | কিছুদিন আগে ফটো না তুলতে পারায় খুব বকুনি দিয়েছিলাম, কিন্তু সেই দিন ময়ুরকে thank you না দিয়ে পারিনি | 


এক বছর আগে জন্মাষ্টমীর বিকেলে সহপাঠিদের সাথে ক্রিকেট খেলতে জে. এন .ইউ স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম | ফিল্ডিং করছি মিড স্কোয়ারলেগের দিকে | আমার এক সহপাঠি ফুলটস একটা বলকে মিড অন এর উপর দিয়ে তুলে দিয়েছে | দৌড়ে গেলাম ঐদিকটায়, কিন্তু ততোক্ষনে বল ওভার বাউন্ডারি হয়ে গিয়েছে | গাছের এক কোনায় উঁকি দিচ্ছে বল বাবাজি আর মিটি মিটি হাসছে | তার হাসি দেখে রেগে কুড়িয়ে নিয়ে মাঠে ছুড়ে দিয়েছি, এমন সময় পায়ে কি যেন একটা লাগলো | নিচে তাকিয়ে দেখি সুশোভিত একটি ময়ুর পালক পড়ে রয়েছে | কুড়িয়ে নিলাম | খেলা শেষে এগোলাম রুমের দিকে | ময়ুরের দেওয়া সেই উপহার পৌঁছে দিতে যথা স্থানে...|


গতকাল আমরা ব্যস্ত ছিলাম একটা বিশেষ কাজে | এখানে আমরা বলতে, আমাদের গানের দল 'সপ্তক' এর কথা বলছি | পড়াশুনার পাশাপাশি গানটি ও ছিল আর এক ভালো লাগার জায়গা | সদ্য প্রকাশিত গানের অ্যালবামের ভিডিও শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম সবাই | জে. এন .ইউ এর বিভিন্ন location এ আমরা শুটিং করছি | এমন সময়  হঠাৎ দেখি পায়ের কাছে একটি ময়ুর পালক | কুড়িয়ে নিয়ে দেখি, পালকটি ছোট, এখনও সম্পূর্ণ বিকশিত হয়নি | ভাবলাম দুস, কেউ এটাকে বোধ  হয় নেয়নি তাই পড়ে আছে | ফেলে দিলাম| সবাই শুটিং সেরে  ফিরে আসছি, এমন সময় দেখি আমার সহধর্মিনী ওই পালক কুড়িয়ে নিয়ে আমায় দিচ্ছে  আর বলছে আজ জন্মাষ্টমী এটা কেষ্ট ঠাকুরের উপহার| সাথে সাথে আমার ফেলে আসা এই বিশেষ দিনটির ঘটনা গুলি মনে পড়ে গেল | বুঝলাম কেষ্ট ঠাকুর এবারও তার উপহারের জন্য অপেক্ষা করছিল | একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল বুঝতে... sorry কেষ্ট ঠাকুর !!!


2 comments:

Facebook Comments