সোমা বিশ্বাস
ফুলি
গায়ের ঠিক মাঝখানে আজ পঞ্চায়েত বসেছে। ফুলিকে নিয়ে খুব ছিঃ ছিঃ হচ্ছে সেখানে। ফুলি তো আজ একেবারে গায়ের লোকের নাক কেটে রেখে দিয়েছে পুরো দুনিয়ার সামনে। শহরের কোন এক বড় নেতাকে গুলি করে আজ তাকে মেরেই ফেলেছে আর তারই পকেট থেকে পিস্তল বের করে। টিভিতে ব্রেকিং নিউজে বারেবারে আজকে সে খবর দেখিয়ে চলেছে। লকআপের ভিতর যখন ফুলিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তার ভাবলেশহীন চেহারায় এতোটুকু ভয়, দুখঃ, অপরাধবোধ বা লজ্জা কিছুই ছিল না।
এমন নির্লজ্জ মেয়েকে আচ্ছা করে দেওয়া দরকার । পঞ্চায়েত মিলেও কিছু করতে পেরেছিল না সেবার। ওর মা বাবা সঙ্গে পুরো পরিবারের জলকল বন্ধ করে তাদের এক ঘরে করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্চায়েত। এবার তারা আগের থেকেও কঠিন হয়েছে শাস্তি দেবার ব্যাপারে। ফুলি আগেও বরের ঘর থেকে পালিয়ে গেছিল। তখন ওর বর পুরো পঞ্চায়েতের সামনে ক্ষমা চেয়েছিল ফুলির হয়ে। একঘরে হওয়া থেকে ওর পরিবার সেবারের মতো মুক্তি পেয়েছিলো। এক আধ বার অপরাধ মাফ করে দেওয়া যায় তাই বলে তো বারবার দেওয়া যায় না। তার উপরে কাউকে খুন করার মত এত বড় অপরাধ?
এইজন্যেই মেয়ে জাতকে বেশি লাই দিয়ে মাথায় তুলতে নেই। রান্নাঘর আর উঠোনের মধ্যেই তাদেরকে বেঁধে রাখার দরকার। বিয়ের আগে যেই না দু কেলাশ পড়ে নিয়েছে শহরের দিদির কাছে, তাতে যেন নিজেকে একেবারে আইনের দেবী মনে করে সে। পুরো গ্রামের মহিলাদের সারাক্ষণ ফুসলিয়ে যেত, “বরাবর সম্মান চাই।“ “ পুরুষের বরাবর অধিকার চাই।“ এখন ন্যাও অধিকার। তার বর এতটাই ভাল যে যখন ফুলি পালালো সারা গ্রামের সামনে পঞ্চায়েতের সামনে বউয়ের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল। এত ভালো বর ফুলির যে আজ পর্যন্ত ফুলির অপেক্ষায় বসে রয়েছে, দ্বিতীয় বিয়ের নাম নিল না পর্যন্ত। এত ভাল বর তা সহ্য হলো না ওনার।
পঞ্চায়েত থেকে ফেরার সময় গ্রামবাসীদের মধ্যে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। তখন, গ্রামের শেষ প্রান্তে এক পুরোনো ভাঙা মন্দিরের পেছনে বসে গায়ের কিছু লাফাঙ্গা মাতাল গল্প করছিল-
“ এবার শালী টের পাবে জেলের ঘানি টানা কাকে বলে। শালী আমার লিঙ্গ কেটে পালিয়ে ছিল? লজ্জায় গায়ের লোকের সামনে উফফ পর্যন্ত করতে পারিনি। সত্যি লুকিয়ে রাখার জন্য তার নাম করে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় রেখে গেছে আমার জন্য?” এক মাতাল মদ খেতে খেতে বলে উঠলো।
“সেতো বাঁচোয়া ছিল কি আমরা তোকে দূরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাই যাতে তোর জীবন বাঁচে” দ্বিতীয় মাতাল বলে উঠলো।
“ফুলি ছিল বটে একেবারে চিতার ধক-ধকে আগুন”, তিন নম্বর মাতাল বলে চলল, ” আগুন লোভ দেখায় কাছে আসার, কাছে আসো তো পুরো ঝলসে দেয়। শালী কোনদিন এতটুকু ছুঁতেপর্যন্ত দিল না!”
ঠররার শেষ ফোটাটাও গলার ভিতরে ঢেলে দিয়ে শেষ জন বলে উঠলো, “দেখ ভাই খুন যখন সে করেছে আজ নয়তো কাল তার ফাসি নয়তো যাবজ্জীবন জেল, কিছু একটা তো হবেই। তবে লাখ টাকার একখানা কথা আছে বই কি বুঝলি? ফুলি যাকে গুলি করে শেষ করেছে সে নিশ্চয়ই পাক্কা লুচ্চা ছিল।
ব্যাপক !
ReplyDelete